ভ্রামমান প্রতিনিধি নওগাঁ জেলাঃ
নওগাঁয় শ্রমিকের সংকট এবং মজুরি দ্বিগুণ, জমিতেই গজাচ্ছে ধানে চারা/ অংকুর।
দেশের অন্যতম প্রধান ধান উৎপাদনকারী জেলা নওগাঁয় চলছে বোরো ধান কাটা-মাড়াই। এপ্রিল ও চলতি মাসের শুরু থেকে দফায় দফায় ঝড়-বৃষ্টিতে জেলার বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টির কারণে মাঠের বেশিরভাগ ধান ক্ষেত এখন পানির নিচে। ধান কাটার শ্রমিক সংকট হওয়ায় মজুরি দ্বিগুণ দিয়েও শ্রমিক না থাকায় জমিতেই ধানে চারা/ অংকুর গজাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে সবচেয়ে বড় সংকট শ্রমিক । এমনিতেই গত বছরের তুলনায় এ বছর শ্রমিকের মজুরি গুণতে হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি। এতে করে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নওগাঁর কৃষকরা। সঠিক সময়ে ঘরে ধান তোলা নিয়ে কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ। অনেকে বাধ্য হয়ে পরিবারের লোকজন নিয়ে কাটছেন ধান। কেটে রাখা বোরো ধান জমিতেই পড়ে থাকছে। ফলে শ্রমিকরা এসব ভেজা ধান বহন করতে পারছেন না। আবার সঠিক সময়ে মাড়াই করতে না পারায় ধানেরও ক্ষতি হচ্ছে। অনেকে আবার বাড়তি পারিশ্রমিক দিয়ে ধান কেটে ঘরে তুলছেন। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে লোকসান হবে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
সরেজমিন নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ছাতড়ার বিল, চন্দননগর, বেনীপুরে, বুধুরিয়া, বামইন, চণ্ডিপুর, হাজিনগর, কাপাষ্টিয়া, রসুলপুর সহ বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, গত মাসে জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া দু’দফা কালবৈশাখী ঝড় এবং চলতি মাসে ঘূর্ণিঝড় অসনির কারণে হেলে পড়া ধানের ৯৫ শতাংশ পেকে গেছে। ধান পাকলেও শ্রমিক সংকটের কারণে এখনও অনেক কৃষক জমির ধান কাটতে পারেননি। এখনও থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় অনেক মাঠের নিচু জমিতে পানি জমে আছে। পানি জমে থাকায় ধান থেকে আবারও নতুন করে চারা গজিয়ে যাচ্ছে। এসব হেলে পড়া ভেজা ধান কাটতে স্থানীয় শ্রমিকদের মাঝে অনীহা দেখা দিয়েছে। মাঠে মাঠে নারী-পুরুষসহ সব বয়সী মানুষকে ভেজা ধান ডাঙায় তুলতে দেখা গেছে। দফায় দফায় বৃষ্টিতে অসহায় হয়ে পড়েছেন জেলার কৃষকরা।
কৃষকরা বলছেন, মৌসুম জুড়ে কয়েক দফা বৃষ্টির কবলে পড়েছেন চাষিরা। যাদের ধান কাটা সম্ভব হয়নি, তাদের জমিতে পড়ে থাকা ভেজা ধানে এখন চারা গজিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া শ্রমিক সংকটে ধান কাটতে পারেননি চাষিরা। এসব ধান তারা ভালোভাবে ঘরে তুলতে পারবেন কিনা, এ নিয়ে যেমন শঙ্কা রয়েছে। একই কারণে শঙ্কা রয়েছে ধানের ভালো দাম পাওয়া নিয়েও। এ ছাড়াও যেখানে গত বছর বিঘা প্রতি ধান কাটতে দুই থেকে তিন হাজার টাকা খরচ হলেও এ বছর জেলার বাইরে থেকে বেশি সংখ্যাক কৃষি শ্রমিক না আসায় স্থানীয় শ্রমিকদের বিঘা প্রতি পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা মজুরি দিতে হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামছুল ওয়াদুদ বলেন, দুই দফা ঝড়-বৃষ্টিতে ফসল আক্রান্ত হওয়ায় এবার আমাদের বোরো ধানের ফলন কিছুটা কম হবে। জেলার সব মাঠের ৯৫ শতাংশ ধান পেকেছে। যেহেতু এখনও আবহাওয়া খারাপ তাই দেরি না করে দ্রুত ধান কেটে ফসল ঘরে তুলতে কৃষকদের প্রতিনিয়ত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমাদের ৬৫ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। শ্রমিক সংকটের কারণে এবার কৃষক ফসল ঘরে তুলতে একটু সমস্যায় পড়েছেন।
তিনি বলেন, প্রতি বছর পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আমাদের এখানে বোরো মৌসুমে কৃষি শ্রমিক আসেন। এবার তারা আসতে পারেননি। কারণ একই সময় ওই অঞ্চলগুলোতে ধান পেকেছে। আমাদের এখানে বোরোর রেকর্ড পরিমাণ আবাদ হয়। তাই এ ফসল ঘরে তুলতে স্বাভাবিকভাবেই বাইরের শ্রমিকের প্রয়োজন বেশি পড়ে। শ্রমিক সংকট না থাকলে এতদিন প্রায় সব জমির ধানই কাটা শেষ হয়ে যেত।
লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু এখনও মাঠে ৩৫ শতাংশ ধান আছে তাই এখনই বলা যাচ্ছে না লক্ষমাত্রা পূরণ হবে কিনা। তবে আগামী ১০ দিনের মধ্যেই মাঠের সব ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
উল্লেখ্য, চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৮৭ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে বড় অংশই জিরা, কাটারিভোগ, বিআর-২৮ ও বিআর-২৯ জাতের ধান। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ লাখ মেট্রিক টন।
ভ্রামমান প্রতিনিধি নওগাঁ জেলাঃ
নওগাঁয় শ্রমিকের সংকট এবং মজুরি দ্বিগুণ, জমিতেই গজাচ্ছে ধানে চারা/ অংকুর।
দেশের অন্যতম প্রধান ধান উৎপাদনকারী জেলা নওগাঁয় চলছে বোরো ধান কাটা-মাড়াই। এপ্রিল ও চলতি মাসের শুরু থেকে দফায় দফায় ঝড়-বৃষ্টিতে জেলার বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টির কারণে মাঠের বেশিরভাগ ধান ক্ষেত এখন পানির নিচে। ধান কাটার শ্রমিক সংকট হওয়ায় মজুরি দ্বিগুণ দিয়েও শ্রমিক না থাকায় জমিতেই ধানে চারা/ অংকুর গজাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে সবচেয়ে বড় সংকট শ্রমিক । এমনিতেই গত বছরের তুলনায় এ বছর শ্রমিকের মজুরি গুণতে হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি। এতে করে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নওগাঁর কৃষকরা। সঠিক সময়ে ঘরে ধান তোলা নিয়ে কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ। অনেকে বাধ্য হয়ে পরিবারের লোকজন নিয়ে কাটছেন ধান। কেটে রাখা বোরো ধান জমিতেই পড়ে থাকছে। ফলে শ্রমিকরা এসব ভেজা ধান বহন করতে পারছেন না। আবার সঠিক সময়ে মাড়াই করতে না পারায় ধানেরও ক্ষতি হচ্ছে। অনেকে আবার বাড়তি পারিশ্রমিক দিয়ে ধান কেটে ঘরে তুলছেন। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে লোকসান হবে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
সরেজমিন নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ছাতড়ার বিল, চন্দননগর, বেনীপুরে, বুধুরিয়া, বামইন, চণ্ডিপুর, হাজিনগর, কাপাষ্টিয়া, রসুলপুর সহ বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, গত মাসে জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া দু’দফা কালবৈশাখী ঝড় এবং চলতি মাসে ঘূর্ণিঝড় অসনির কারণে হেলে পড়া ধানের ৯৫ শতাংশ পেকে গেছে। ধান পাকলেও শ্রমিক সংকটের কারণে এখনও অনেক কৃষক জমির ধান কাটতে পারেননি। এখনও থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় অনেক মাঠের নিচু জমিতে পানি জমে আছে। পানি জমে থাকায় ধান থেকে আবারও নতুন করে চারা গজিয়ে যাচ্ছে। এসব হেলে পড়া ভেজা ধান কাটতে স্থানীয় শ্রমিকদের মাঝে অনীহা দেখা দিয়েছে। মাঠে মাঠে নারী-পুরুষসহ সব বয়সী মানুষকে ভেজা ধান ডাঙায় তুলতে দেখা গেছে। দফায় দফায় বৃষ্টিতে অসহায় হয়ে পড়েছেন জেলার কৃষকরা।
কৃষকরা বলছেন, মৌসুম জুড়ে কয়েক দফা বৃষ্টির কবলে পড়েছেন চাষিরা। যাদের ধান কাটা সম্ভব হয়নি, তাদের জমিতে পড়ে থাকা ভেজা ধানে এখন চারা গজিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া শ্রমিক সংকটে ধান কাটতে পারেননি চাষিরা। এসব ধান তারা ভালোভাবে ঘরে তুলতে পারবেন কিনা, এ নিয়ে যেমন শঙ্কা রয়েছে। একই কারণে শঙ্কা রয়েছে ধানের ভালো দাম পাওয়া নিয়েও। এ ছাড়াও যেখানে গত বছর বিঘা প্রতি ধান কাটতে দুই থেকে তিন হাজার টাকা খরচ হলেও এ বছর জেলার বাইরে থেকে বেশি সংখ্যাক কৃষি শ্রমিক না আসায় স্থানীয় শ্রমিকদের বিঘা প্রতি পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা মজুরি দিতে হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামছুল ওয়াদুদ বলেন, দুই দফা ঝড়-বৃষ্টিতে ফসল আক্রান্ত হওয়ায় এবার আমাদের বোরো ধানের ফলন কিছুটা কম হবে। জেলার সব মাঠের ৯৫ শতাংশ ধান পেকেছে। যেহেতু এখনও আবহাওয়া খারাপ তাই দেরি না করে দ্রুত ধান কেটে ফসল ঘরে তুলতে কৃষকদের প্রতিনিয়ত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমাদের ৬৫ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। শ্রমিক সংকটের কারণে এবার কৃষক ফসল ঘরে তুলতে একটু সমস্যায় পড়েছেন।
তিনি বলেন, প্রতি বছর পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আমাদের এখানে বোরো মৌসুমে কৃষি শ্রমিক আসেন। এবার তারা আসতে পারেননি। কারণ একই সময় ওই অঞ্চলগুলোতে ধান পেকেছে। আমাদের এখানে বোরোর রেকর্ড পরিমাণ আবাদ হয়। তাই এ ফসল ঘরে তুলতে স্বাভাবিকভাবেই বাইরের শ্রমিকের প্রয়োজন বেশি পড়ে। শ্রমিক সংকট না থাকলে এতদিন প্রায় সব জমির ধানই কাটা শেষ হয়ে যেত।
লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু এখনও মাঠে ৩৫ শতাংশ ধান আছে তাই এখনই বলা যাচ্ছে না লক্ষমাত্রা পূরণ হবে কিনা। তবে আগামী ১০ দিনের মধ্যেই মাঠের সব ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
উল্লেখ্য, চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৮৭ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে বড় অংশই জিরা, কাটারিভোগ, বিআর-২৮ ও বিআর-২৯ জাতের ধান। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ লাখ মেট্রিক টন।